‘বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র’
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ইস্যু করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায় বলে মনে করছেন ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এসওয়াই রামাদান। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশে তার নিয়ন্ত্রণ। এখানে সুষ্ঠু বা অবাধ নির্বাচন হলো কি না সে বিষয়ে আগ্রহ নেই তাদের। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
তবে কোনো দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এমন আগ্রহকে প্রশ্নের চোখে দেখছেন ইউসুফ এসওয়াই রামাদান। তিনি বলেন, ‘আমি সোজা সাপ্টা একটা কথা বলতে চাই। যুক্তরাষ্ট্র আসলে এদেশে অস্থিরতা তৈরি করতে চায়। নির্বাচন সুষ্ঠু হলো কি হলো না তাদের কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটা একটি সতর্কতা।’
নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে ইউসুফ বলেন, ‘ভৌগলিকভাবে ভারত ও চীনের মত শক্তিশালী দেশের মধ্যে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। মূল সংকট হলো যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শক্র চীন, তাদের আপত্তি চীনের উদয়মান অর্থনীতি। তাদের অনুদানের সক্ষমতাসহ, চীনের গোটা অবস্থান যুক্তরাষ্ট্র মেনে নিতে পারছে না। আর সেজন্যই যুক্তরাষ্ট্র চায় চীনের ডানা কেটে দিতে এবং যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে বাংলাদেশ চীনের সেই ডানার একটি ছোট অংশ।’
যুক্তরাষ্ট্র মনে করে- তার চেয়ে চীন, ভারত ও রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বেশি ঘনিষ্ঠ, যা ওয়াশিংটনের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যোগ করেন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত।
ইউসুফ এসওয়াই রামাদান বলেন, ‘জনসংখ্যা দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। এটা একটা বড় মার্কেট। এত বড় মার্কেটে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য কম কেন? তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ কেন অস্ত্র কিনছে না? কেন শুধু চীন বা রাশিয়া বা কোন কোন ক্ষেত্রে ভারত থেকে অস্ত্র কিনছে? কোয়াডের কথাই বলি বা যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট, কেন বাংলাদেশ তার সদস্য হচ্ছে না? বাংলাদেশ কেন তাদের নেতৃত্বধীন জোটে যেতে অস্বীকার করেছে?
’ইউসুফ বলেন, ‘কেন বাংলাদেশ তার ভূখণ্ডের একটি অংশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বা নৌ ঘাঁটি স্থাপনের জন্য দিতে চায় না। বাংলাদেশকে কে যুক্তরাষ্ট্রকে 'না' বলতে শিখিয়েছে? বাংলাদেশের না - বলা মেনে নিতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র।’
শক্তিশালি দেশের অপশন না মানলে কি হবে তাও জানান ইউসুফ এসওয়াই রামাদান। তিনি বলেন, ‘যখন বাংলাদেশ না বলবে তখন তাকে মূল্য দিতে হবে। বাংলাদেশকে দুটো অপশন দেয়া হয়েছে, হয় তুমি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের পক্ষে অবস্থান নেবে, না হয় বাকি দেশগুলোকেও না বলে দেবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের হাতের পুতুল হবে।’
ফিলিস্তিনি দূত বলেন, ‘আর দ্বিতীয় অপশনটি হলো যুক্তরাষ্ট্রকে না বলে নিজের স্বাধীন সাবভৌমত্ব ধরে রাখবে এবং বলবে বাংলাদেশ তার মান মর্যাদা ধরে রেখে জনগণের পক্ষে থাকবো এবং স্বাধীনভাবে নিজের সিদ্ধান্ত নিবে। দুটোর জন্যই মূল্য দিতে হবে।’
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের পর্যবেক্ষণ, পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো নিজেদের শক্তিধর মনে করে এবং বিশ্বাস করে বিশ্বের তৃতীয় পর্যায়ের দেশগুলো তাদের হুকুম মেনে চলতে বাধ্য।
ইউসুফ এসওয়াই রামাদান বলেন, ‘আমাদের বেলায় পশ্চিমারা তিনটি অপশন রেখেছে। তাদের ভাষ্য হলো আমরা ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অধীনে থাকলে শান্তি আসবে কিন্তু তাতে আমাদের মান মর্যাদা বিসর্জন দিতে হবে। অথবা আমরা আমাদের ভূমি ছেড়ে চলে যাব যার ফলে ইসরায়েলের আয়তন আরো বাড়বে, তারা আমাদের বাড়ি ঘর দখল করে নেবে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আরেকটা বিকল্প হচ্ছে আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া, এক্ষেত্রে পশ্চিমারা আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না, দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে তারা কথা বলবে না, বরং তারা আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা আমাদের প্রভু, প্রভুর কথা অনুযায়ীই চলতে হবে, এটাই তাদের বিশ্বাস।